মেয়েদের চুল উঠার কারণ---

                                              দেখা যাক চুল কেন উঠে

চুল সবারই পড়ে। পুরুষ-মহিলা উভয়েরই এই সমস্যা রয়েছে। কিন্তু কি কি কারণে চুল পড়ে সে সম্পর্কে আমাদের তেমন একটা ধারণা নেই। আশা করি এই প্রতিবেদনে সবারই সে ধারণা জন্মাবে। 



মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া বলে। মেয়েদের মাথার উপরিভাগের চুল ও দুপাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ নারীর এ সমস্যা হয়। প্রতিদিন ১০০ টি বা এর কম চুল পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। চুল পড়ে যাওয়া তখনই সমস্যা, যখন দিনে ১০০ টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না। পরিবারে চুল পড়ার সমস্যা থাকলে চুল পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম। নানা রকম ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে, তখন তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায়, তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে গিয়ে চুল আর বড় হয়না এবং এক সময় চুল পড়তে শুরু করে




ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েট করা অনেক সময় চুল পড়ার কারণ। অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ডায়েটের সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়া প্রয়োজন। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণে চুল পড়ে। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে নিজের মনমতো না করে ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট, চিকিৎসক ও ত্বক বিশেষজ্ঞের মতামত নেবেন।


শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুল ঝরে গেলেও আর নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস, আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপ খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা ও থাইরয়েডের সমস্যায়ও চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।




হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের চুল পড়ার সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে চুল পড়তে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের তিন মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন লক্ষ করা সম্ভব। আবার সঠিক যত্নে তিন মাসের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রজঃনিবৃত্তি বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও নারীদের চুল পড়ে।চুল পড়ে যাওয়ার বড় কারণগুলো হচ্ছে, বংশগত কারণে মাথায় টাক পড়া, হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়া, আর সন্তান হবার পরবর্তী সময় অর্থাৎ হরমোনের কারণে চুল পড়ে যাওয়া৷ বংশগত কারণে টাক পড়লে তেমন কিছু করার থাকে না৷ তবে বাকি দুটো কারণে চুল পড়লে সময়মতো চিকিৎসা করালে চুল রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কোলন শহরের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. উটে লিংকা।


মেয়েদের সরাসরি টাক না পড়লেও চুল পড়ার সমস্যা হয়, তবে তা অনেকটা দেরিতে৷ মেয়েদের সাধারণত ৫০ বছরের পরে চুল পড়তে শুরু করে৷ তবে মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্য হলে চুল বেশি পড়ে৷ মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব, প্রসব এবং মেনোপজের কারণে বেশিরভাগ মেয়েদেরই চুল পড়তে পারে৷ তবে গর্ভবতী মেয়েদের অনেকের চুল পড়ে আবার কারো বা চুল আরো ঘন হয়ে থাকে৷ তবে এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই৷
খাদ্যে পুষ্টির অভাব এবং কড়া ডায়েটিং-এর ফলেও চুল পড়তে৷ তাই ভিটামিনযুক্ত খাবার এবং প্রচুর মাছ খাওয়া দরকার৷ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ সুন্দর চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী৷ তাছাড়া দুধ, ডিম, শাক-সবজি অবশ্যই খাবারের তালিকায় রাখতে হবে৷ আর যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না যেন !ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেও চুল পড়তে পারে, তবে তা বেশিদিন থাকেনা৷ ওষুধ বন্ধ করে দিলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন চুল গজায়৷ ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ার পর পুরো মাথার চুল পড়ে গেলেও সেই জায়গায়ই কিছুদিন পরে আবার নতুন চুল ওঠে৷



চুল পড়া বন্ধ হবে বা নতুন চুল গাজাবে – বাজারে এ ধরনের নানা আকর্ষণীয় ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়৷ অনেকেই উপায়ান্তর না দেখে এসব বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হয়ে চুলে নানা রকম তেল বা ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যার ফল হয় উলটো৷ বিশেষজ্ঞের মতে, এসব দিকে না তাকিয়ে সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত৷

শরীরে থাইরয়েডের মাত্রার তারতম্য হলে শুধু চুল পড়া নয় – নখ এবং ত্বকেও পরিবর্তন দেখা দেয়৷ তাছাড়া এই সমস্যায় অনেকে ক্লান্ত বোধও করেন৷ কাজেই নিজের মধ্যে এসব পরিবর্তন দেখলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ৷ শরীরে আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলেও চুল পড়তে পারে৷ সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়ে থাকে৷ তবে এসবই যে আসল কারণ তা নাও হতে পারে, ত্বকের ডাক্তারের কাছে সবকিছু পরীক্ষা করিয়ে খুঁজে বের করতে পারলেই কেবল সঠিক চিকিৎসা সম্ভব বলে জানান কোলনের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উটে লিংকার৷

বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কারণেও চুল পড়তে পারে৷ আজকের যান্ত্রিক জীবনে স্ট্রেস থেকে মুক্ত, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম৷ আজকের যুগে নারী-পুরুষ অনেকেই চুলে নানা ধরনের রং, শ্যাম্পু, ড্রায়ার, স্ট্রেটনার কত কী ব্যবহার করে থাকেন৷ অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ, অতিরিক্ত গরম তাপ, গরম পানি চুলকে খুব সহজেই নষ্ট করে ফেলতে পারে৷ এসব দিকে কিছুটা লক্ষ্য রাখলে চুল পড়া কমতে পারে৷

উপরোক্ত সকল তথ্য মানতে পারলে আশা করা যায় চুল পড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ।


No comments

Theme images by Raycat. Powered by Blogger.