বয়সন্ধিকালের লক্ষণ, ক্ষতিকর প্রভাব, শারিরীক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ, শারিরীক পরিপক্বতা, আচরনগত দিক, শরীরের বৃদ্ধি, পুষ্টি, ওজন,উচ্চতা ইত্যাদি ।

বয়সন্ধিকাল




বয়সন্ধিকালের সূচনাঃ


 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ বছর এবং ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে কৈশোর বলে ।এর মধ্যে যে কোন এ সময়ে বয়ঃসন্ধিকাল আসতে পারে । এটা মূলত কৈশোর ও যৌবনের মধ্যবর্তী পর্যায় । অনেক সময় ১৯ বছরের পরও বয়ঃসন্ধিকাল থাকতে পারে । যা বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে । মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল, ছেলেদের চাইতে কিছুটা আগে শুরু হয় । মূলত ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল আসে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে ।

বয়সন্ধিকালে মেয়েদের উচ্চতা বাড়ে । শরীরের বিভিন্ন অংশ স্ফীত হয়। বাহুমূল ও যৌনাঙ্গে লোম গজায়। মাসিক শুরু হয় । তেমনি ছেলেদের ক্ষেত্রে, এসময় তাদের দেহের উচ্চতা দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে, গলার স্বর ভারি হয়ে আসে, কাঁধ চওড়া হয়, পেশী সুগঠিত হয় । মুখে দাড়ি-গোঁফ ওঠে সেইসঙ্গে শরীরের নানা জায়গায় বিশেষ করে, বুকে, বাহুমূলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায় । এই সময়ে ছেলেরা  বেশি ঘামে । বয়ঃসন্ধির এই সময়টা ছেলে মেয়ে উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা বিকাশ হতে থাকে বলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ হয় । অনেক সময়ে ঘুমের মধ্যে ছেলেদের বীর্যস্খলন হয়ে থাকে। যা অস্বাভাবিক কিছু নয় বা এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ারও কিছু নেই । এটি বয়ঃসন্ধির একটি লক্ষণ।

বয়সন্ধিকালের বিকাশঃ


বয়সন্ধিকালে প্রত্যেক ছেলে মেয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা তৈরি হয়। তার কী পছন্দ-অপছন্দ, সে কী চায়। এছাড়া নিজের জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম সম্পর্কে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এবং তারা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন মানুষ হিসেবে জীবনের এই পর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করে । শৈশবে ছেলে-মেয়েরা মা বাবা যা বলে তাই করে । কিন্তু এই বয়ঃসন্ধির সময় তারা স্বাধীনভাবে সবকিছু ভাবতে শুরু করে । সে কী পরবে, কী খাবে, কাদের সাথে মিশবে সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নেয়। যা তার পরিবারের থেকে আলাদা হতে পারে। এজন্য বাবা মায়ের সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ভালমন্দের একটা কনসেপ্ট তৈরি হয়, যদিও সেটাকে খুব পরিপক্ব বলা যাবে না। এ সময় তাদের মধ্যে হরমোনাল কারণে আবেগের প্রাবল্য দেখা দেয়। মুড সুইং হয় বা মন মেজাজ খুব দ্রুত ওঠানামা করে। অল্পতেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ।আবেগ বেড়ে যায় ,তার মনে হয় সে যেটা করে সেটাই ঠিক ।অল্পতই আনন্দিত হয় আবার অল্পতেই মনমরা হয়ে যায় ।বয়ঃসন্ধিতে থাকা ছেলে মেয়েরা ভীষণ কৌতূহলপ্রবণ হওয়ায় অনেক সময় তাদের বিপথগামী হওয়ার, মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়া, অযাচিত ঝুঁকি নেয়া বা অপসংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এই বয়সটাতে ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের চাইতে বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। অনেকেই বাবা মায়ের বাঁধা মেনে নিতে পারে না রেগে যায়। এ বিষয়গুলো বাবা মায়ের পক্ষে নেয়াও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু তাদের ধৈর্য ধরে তাদের আচার আচরণের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে সন্তানের সাথে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা কোনভাবেই গায়ে তোলা যাবে না। এছাড়া তুলনা করা, ছোট করে কথা বলা ঠিক না।
তার মানে এই নয় যে তারা যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে। সন্তানের পছন্দ, অপছন্দের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। যেন তার আত্মসম্মানে আঘাত না আসে আবার ভাল-মন্দের ব্যবধানটাও সে বুঝতে পারে ।

বয়সন্ধিকালের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ঃ


বয়ঃসন্ধিকালে যেহেতু ছেলে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতার বিকাশ হয় তাই এই বয়সে সেক্স এডুকেশন বা যৌনশিক্ষা ব্যবস্থা করা বেশ জরুরি ।যেখানে তার এই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের দিকগুলোর বিষয়ে জানতে পারবে । এতে করে তারা ঘাবড়ে যাবে না বা সবকিছু নিয়ে বেশি চিন্তিত হবেনা । তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে জানতে পারবে ।ছেলেদের যে রাতে বীর্যস্খলন হয়, এটা যে স্বাভাবিক। বা ছেলে-মেয়েরা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে এটা যে স্বাভাবিক সেটা তারা জানতে পারবে ।বয়ঃসন্ধিকালীন সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও যৌনরোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করার জ্ঞান থাকা জরুরি ।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালে বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে অপুষ্টিতে ভোগে। কারণ স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে বেশিরভাগ পরিবার সচেতন নয়। তাই এই সময় ছেলে মেয়ে উভয়কে, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, জিংক, আয়োডিন, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন, শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাওয়াতে হবে ।

বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা ও সমাধানঃ



প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ বা বিশ্বের জনসংখ্যার 6 জনের মধ্যে ১ জন ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর।বয়ঃসন্ধিকালে  কৈশোর-বয়সীরা যৌন পরিপক্কতার বিকাশ করে। এটি আপনার সন্তানের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং বিশ্রী সময় হতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানদের জানিয়েছে যে বয়সে বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় সেই বয়স থেকে একজনের চেয়ে অন্যজন আলাদা হয়ে যায়, সাধারণত বয়ঃসন্ধি সাধারণত মেয়েদের উপর প্রভাব ফেলবে প্রায় ১১ বছর বয়সে  বয়ঃসন্ধির অগ্রগতির সাথে সাথে আপনার দেহে অনেকগুলি পরিবর্তন অনুভব হয় যা আপনার লিঙ্গের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। কৈশর কালে স্বাস্থ্যকর আচরণের প্রচার এবং যুবক-যুবতীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে আরও ভাল রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ যৌবনে স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধের জন্য, এবং দেশের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য এবং বিকাশের ও সাফল্যের দক্ষতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বয়ঃসন্ধিকালের লক্ষনঃ

  1.   বয়ঃসন্ধিকাল হল যখন একজন কিশোর পুরুষ এবং কিশোরী নারীতে পরিণত হয় ।
  2.   ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সের যে কোনো সময়ে শুরু হতে পারে ।
  3.   এ সময় কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও বিভিন্ন মানসিক  পরিবর্তন শুরু হয়।
  4.   প্রক্রিয়াটি মোট চার বছর সময় নেয় ।
  5.  বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে 18 বছরের বয়সের আগেই বয়সন্ধি শুরু হয় ।

ছেলেদের ক্ষেত্রেঃ


  • দ্রুত লম্বা হতে থাকে । 
  • ছেলেদের কণ্ঠস্বর গাঢ়, ভারী ও গম্ভীর   হয় এবং পুরুষদের মত চেহারা শুরু হয় ।
  • দাঁড়ি গোঁফ উঠে । 
  • শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে লোম গজাতে শুরু করে ।
  • শুক্রাণুসহ বীয উৎপন্ন হয় । 
  • রাতে স্বপ্নদোষ হয় ।
  • মুখে,বুকে এবং পিঠে ব্রণ  হয় । 
  • লিঙ্গ সুগঠিত ও কাযক্ষম হয়ে ওঠে ।
  • শরীরের মাংসপেশী সুগঠিত ও বলিষ্ঠ  হয়। মুখ ও পেটে মেদ বৃদ্ধি পায়
  • ছেলেদের গড় বয়ঃসন্ধিকাল বয়স ১৪ বছর ।

মেয়েদের ক্ষেত্রেঃ 


  1. ঋতুস্রাব বা মাসিক শুরু হয় ।
  2.  মেয়েদের স্তন প্রচুর মেদ সঞ্চিত হয়ে সুডৌল ও উন্নত হয় ।
  3.  অনেক সময় স্তনের মাংসপেশী অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় । ফলে স্তনখুব ব্যথা  করে । 
  4.  চুল দ্রুত বড় হতে শুরু করে কোমর বড় হয় এবং ওজন বেড়ে যায়কন্ঠ চিকন হয় ও ব্রণ হয়মেয়েদের সাদাস্রাব হতে পারে ।
  5.  মেয়েরা দ্রুত লম্বা হতে থাকে
  6. মেয়েদের বয়ঃসন্ধি শুরুর  গড় বয়স ১২ বছর । 


No comments

Theme images by Raycat. Powered by Blogger.