*** ডায়রিয়া ,ডায়রিয়ার লক্ষণ ও করণীয়
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম । যদিও ডায়রিয়া সব বয়সের মানুষকে হয়ে থাকে ,তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ভয়ঙ্কর একটি প্রাণঘাতী রোগ। শিশুমৃত্যু ও শিশুর অপুষ্টির একটি বড় কারণ হচ্ছে ডায়রিয়া । তাই ডায়রিয়া রোগ সম্পর্কে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে ।
ডায়রিয়া কি ?
সাধারণত ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে । তবে ডায়রিয়া শনাক্তকরণে আমাদের আরো স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে । এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো দেখা যায়-
# ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ।
# পায়খানায় পানির পরিমাণ বেশি থাকা।
# ২৪ ঘণ্টায় ৩ বার বা তারও বেশি পাতলা পায়খানা হওয়া ।
# মায়ের দুধ খাওয়া শিশুরা ৫-১০ বারও পায়খানা করাতে পারে ।
ডায়রিয়ারা কারন
ডায়রিয়া খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ । রোগ-জীবাণু খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ডায়রিয়া ঘটায় ।আমাদের দেশের ডায়রিয়া র জন্য দায়ী রোগ-জীবাণু হচ্ছে- রোটা ভাইরাস, ই-কোলাই, সালম-নিলা, সিজেলা, ভিবরিও কলেরা, ব্যাকটেরিয়া, এন্টিমোইবা হিস্টোলাইটিকা, জিয়ারডিয়া ল্যামবিয়া প্যারাসাইট এবং ক্যানডিডা এলবিক্যানস ফাঙ্গাস ।
কীভাবে ডায়রিয়া জীবাণু সংক্রমিত হয় ?
** বোতলে দুধ খাওয়া শিশুরা সহজে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকে । এ ক্ষেত্রে দুধের বোতল অপরিষ্কার থাকলে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে ।
** খাবার বা পানি খোলা কিংবা অপরিষ্কার পাত্রে রাখলে ।
** পানি ফুটিয়ে না খেলে, সরবরাহকৃত পানিতে অনেক রোগ-জীবাণু থাকে ।
** খাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে না ধুলে ।
** পঁচা-বাসি বা বাইরের খোলা খাবার খেলে।
** মল ত্যাগের পর হাত ভালভাবে না ধুলে ।
** অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ।
ডায়রিয়ার লক্ষণ-
১. ২৪ ঘণ্টায় ৩ বার বা তারও বেশি পাতলা পায়খানা হওয়া ।
২. পাতলা পায়খানর সাথে বমিও হতে পারে ।
৩. প্রসাবের পরিমান কমে যাওয়া ।
৪. কখনো কখনো গায়ে জ্বর থাকতে পারে ।
৫. নাড়ির স্প্দন বা গতি বেড়ে যাওয়া ।
৬. খাদ্যে অরুচি ।
৭. চোখ বসে যাওয়া ।
ডায়রিয়া ও পানি স্বল্পতা-
ডায়রিয়ার পানি স্বল্পতার সম্পর্কে আমাদের সবারই ধারনা থাকা প্রয়োজন । ডায়রিয়ার কারণে শিশুর শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় । ফলে শিশুর শরীরে দেখা দেয় পানি স্বল্পতা । সঠিক সময়ে এ পানি স্বল্পতা রোধ করতে না পারলে শিশুমৃত্যু অনিবার্য । এক্ষেত্রে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে শিশুর শরীরে অনেক লক্ষণ দেখা যাবে-
## শিশু অস্থির ও খিটমিটে হয়ে যাবে ।
## অবসন্ন্ নিস্তেজ হয়ে যাওয়া ।
## অজ্ঞান কিংবা ঘুম ঘুম ভাব লাগা ।
## জিহ্বা শুকনা থাকা ।
## পানি পান করতে কষ্ট হওয়া কিংবা পানি একদমই খেতে না পারা ।
## শিশুর শরীরের চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া ।
ডায়রিয়াজনিত পানি স্বল্পতা রোধে করণীয়-
পানি স্বল্পতা রোধে শিশুকে খাবার স্যালাইন ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে ।ডায়রিয়া হলে শিশুকে বেশি পরিমার মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে । ২ বছরের বেশি বয়সি শিশুদের অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার যেমন-ডাবের পানি, চিঁড়ার লবণ ও সামান্য চিনি দিয়ে রান্না করে খাওয়ানো যেতে পারে । এটি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই উপকারী, একে শস্য স্যালাইন বলে ।
শিশুকে কখন হাসপাতালে নিবেন-
** স্যালাইন খাওয়ানোর পর ৩ দিনে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ না হলে ।
** অতিমাত্রাই পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে ।
** বারবার বমি হতে থাকলে ।
** জ্বর দেখা দিলে ।
** প্রসাব কমে গেলে ।
** রোগী ক্রমশই নির্জীব হতে থাকলে ।
** পায়খানার সাথে রক্ত গেলে ।
** ডায়রিয়ার মেয়াদ ১৪ দিনের বেশি হলে ।
ডায়রিয়া জনিত অপুষ্টি-
ডায়রিয়া শিশুর অপুষ্টির অন্যতম কারণ । অনেক মা শিশুকে দুধ দেয়া বন্ধ করে দেয় কিংবা খাবার কমিয়ে দেয় । ফলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে শুরু করে দেয় । ডায়রিয়া হলে শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হবে । কারণ এক্ষেত্রে শিশুর ক্ষুধা কমে যায় । তাই মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে । যেমন-কাঁচা কলা সিদ্ধ করে নরম ভাত, অল্প তেল মসলার খিচুড়ি, মাছ ইত্যাদি ।শিশুকে টাটকা খাবার দিন , ফ্রিজের খাবার থেকে বিরত থাকুন ।
It's very helpful for us
ReplyDelete